০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এনায়েত পুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ফাঁস দিয়ে মরদেহ ঝোলানো হয় গাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮:২৬:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / 153

এনায়েত পুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ফাঁস দিয়ে মরদেহ ঝোলানো হয় গাছে

এনায়েতপুর থানায় হালমা করে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যাঃ

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনকারীদের ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল ৪ আগষ্ট রবিবার দিনভর সংঘাতের মধ্যে সারা দেশে ভয়ংকর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে ।

পুলিশ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় গতকাল ৪ আগষ্ট রবিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় জঙ্গি কায়দায় হামলা করে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর তাদের একটি লাশের গলায় দড়ি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

এ ছাড়া গতকাল ৪ আগষ্ট রবিবার সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ২৭ থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং রেঞ্জ অফিস ভাঙচুর করে বলে তথ্য দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

গতকাল ১৩ আগষ্ট রবিবার সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার সঙ্গে জঙ্গিদের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়ার কথা বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এটি যাচাই করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, হামলার সময় এনায়েত পুর থানায় ৩৬ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর গতকাল রাত ৯টার পর গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি বলেন,

এনায়েতপুরে ১৩ জন ছাড়াও সংঘর্ষে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এনায়েতপুর থানায় ঢুকে হামলা ও ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। তারা বলেন মিছিল নিয়ে থানায় হামলা করা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে একে একে বের হতে থাকলে তাঁদের পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এরপর তিনজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, হত্যা করে আট পুলিশ সদস্যের লাশ স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। তাঁদের কয়েকজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁদের গায়ের পোশাকও খুলে ফেলা হয়।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, ❝সকাল ১০টার দিকে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। তাদের সঙ্গে সদ্য নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও ছিলেন। এ ছাড়াও সন্দেহজনক কিছু অচেনা লোক ছিল। তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটা ছিল জঙ্গিদের মতো।❞

আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।

এ বিষয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, ❝দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায়। পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রতিহতের চেষ্টা করেও তাদের প্রতিহত করতে পারেনি। এক পর্যায়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা বের হলেই তাঁদের নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ❞

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া বলেন, ❝ঘটনার শুরুতে হাজারখানেক মতো মানুষ দল বেঁধে থানার দিকে আসে। তারা সেখানে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। তার পরে কয়েক শ মানুষ আবার থানায় এসে হামলা চালায়।❞

গতকালের সংঘাত-সংঘর্ষে তিন শর বেশি পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র।

গত ১৬ দিনের সংঘর্ষে দেড় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়।

এ ব্যাপারে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস অ্যান্ড ক্রাইম) বিজয় বসাক বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল এনায়েতপুরে ঘটনাস্থল গেছে । আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের সঙ্গে রয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে ক্লিক করুন

এনায়েত পুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ফাঁস দিয়ে মরদেহ ঝোলানো হয় গাছে

প্রকাশিত ০৮:২৬:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪

এনায়েতপুর থানায় হালমা করে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যাঃ

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনকারীদের ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গতকাল ৪ আগষ্ট রবিবার দিনভর সংঘাতের মধ্যে সারা দেশে ভয়ংকর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে ।

পুলিশ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় গতকাল ৪ আগষ্ট রবিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় জঙ্গি কায়দায় হামলা করে ১৩ পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর তাদের একটি লাশের গলায় দড়ি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

এ ছাড়া গতকাল ৪ আগষ্ট রবিবার সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা ২৭ থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং রেঞ্জ অফিস ভাঙচুর করে বলে তথ্য দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

গতকাল ১৩ আগষ্ট রবিবার সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ঢুকে ১৩ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলার সঙ্গে জঙ্গিদের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়ার কথা বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এটি যাচাই করা হচ্ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, হামলার সময় এনায়েত পুর থানায় ৩৬ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। পুলিশ সদর দপ্তরের পুলিশ সুপার (মিডিয়া) এনামুল হক সাগর গতকাল রাত ৯টার পর গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এখন পর্যন্ত ১৪ জন পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি বলেন,

এনায়েতপুরে ১৩ জন ছাড়াও সংঘর্ষে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এনায়েতপুর থানায় ঢুকে হামলা ও ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে। তারা বলেন মিছিল নিয়ে থানায় হামলা করা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

আত্মরক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে একে একে বের হতে থাকলে তাঁদের পিটিয়ে, মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এরপর তিনজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে লাশ পুকুরে ফেলে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, হত্যা করে আট পুলিশ সদস্যের লাশ স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়। তাঁদের কয়েকজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাঁদের গায়ের পোশাকও খুলে ফেলা হয়।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, ❝সকাল ১০টার দিকে এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। তাদের সঙ্গে সদ্য নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও ছিলেন। এ ছাড়াও সন্দেহজনক কিছু অচেনা লোক ছিল। তাদের কর্মকাণ্ড অনেকটা ছিল জঙ্গিদের মতো।❞

আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।

এ বিষয়ে পুলিশ সূত্র বলছে, ❝দুপুর ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা এনায়েতপুর থানায় হামলা চালায়। পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রতিহতের চেষ্টা করেও তাদের প্রতিহত করতে পারেনি। এক পর্যায়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা বের হলেই তাঁদের নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ❞

এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মোহাম্মদ হান্নান মিয়া বলেন, ❝ঘটনার শুরুতে হাজারখানেক মতো মানুষ দল বেঁধে থানার দিকে আসে। তারা সেখানে কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। তার পরে কয়েক শ মানুষ আবার থানায় এসে হামলা চালায়।❞

গতকালের সংঘাত-সংঘর্ষে তিন শর বেশি পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র।

গত ১৬ দিনের সংঘর্ষে দেড় হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়।

এ ব্যাপারে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অপারেশনস অ্যান্ড ক্রাইম) বিজয় বসাক বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল এনায়েতপুরে ঘটনাস্থল গেছে । আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের সঙ্গে রয়েছেন।